E = mc^2(ইতিহাস বদলে দেওয়া সমীকরণ)!
ইতিহাস বদলে দেওয়া সমীকরণ!
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তিনি যেমনি সুপরিচিত, তেমনি সুপরিচিত তার বিখ্যাত E = mc^2 সমীকরণটি। বিজ্ঞানের জগতে এত বিখ্যাত আর কোনো সমীকরণ দ্বিতীয়টি আছে কি না, তাতে সন্দেহ আছে। সমীকরণটি এত সুপরিচিত হলেও আমরা অনেকেই জানি না কী এর অর্থ।
► সহজ ভাষায়ঃ শক্তি হচ্ছে ভর ও আলোর বেগের বর্গের গুণফল।
► যা আমাদের শিখিয়েছিলঃ সমীকরণে ধ্রুবক থাকায় সামান্য ভরের পরিবর্তনের কারণে বিশাল পরিমাণ শক্তি নির্গত হতে পারে।
আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক দূরদৃষ্টি ও জ্ঞানের একটি অন্তর্নিহিত দিক ছিল। তিনিই সবার আগে উপলব্ধি করেন মেটার বা বস্তু এবং এনার্জি বা শক্তি আসলে একই বস্তুর দুটি রূপ। ম্যাটারকে শক্তিতে রূপান্তর করা যাবে। আর শক্তিকে রূপ দেয়া যাবে মেটারে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। একটি সাধারণ হাইড্রোজেন অণুর কথা ভাবুন। মূলত একটি হাইড্রোজেন অণু তৈরি একটি প্রোটন দিয়ে। প্রোটন হচ্ছে অণু বা অ্যাটমের একটি সাবঅ্যাটমিক পার্টিকল। প্রোটন নামের এই সাবঅ্যাটমিক পার্টিকলের ভর বা mass ০. ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ ০০১৬৭২ কেজি। ওই ভর নিশ্চিতভাবেই ছোট্ট একটি ভর। কিন্তু আমরা প্রতিদিন যেসব ম্যাটার বা বস্তু দেখছি, তাতে আছে প্রচুর পরিমাণ অণু বা অ্যাটম। যেমনঃ এক কেজি বিশুদ্ধ পানিতে হাইড্রোজেন অণুর পরিমাণ ১১১ গ্রাম বা ০.১১১ কেজির চেয়ে সামান্য বেশি। আইনস্টাইনের ফর্মুলা আমাদের জানিয়ে দেয়, এই ভরের পুরোটাই যদি হঠাৎ করে এনার্জিতে রূপান্তর করা হয়, তবে তা কতটুকু এনার্জির সমান হবে। এই সমীকরণ আমাদের বলে, এই এনার্জির পরিমাণ বের করতে হলে আলোর গতির বর্গকে এর ভর দিয়ে গুণ করতে হবে।
E = এনার্জি বা শক্তি
m = ভর বা মাস = ০.১১১ কেজি, ওপরে দেয়া উদাহরণ অনুসারে
c = আলোর গতি = প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ ০০০ ০০০ মিটার
তাহলে আমরা পাচ্ছি,E = mc^2
= ০.১১১ X ৩০০ ০০০ ০০০ X ৩০০ ০০০ ০০০ জুল
= ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ জুল
এই এনার্জির পরিমাণ অবিশ্বাস্য ধরনের বড়। অবশ্য এক জুল খুব একটা বড় মাপের শক্তির একক নয়। মোটামুটিভাবে বলতে পারি একটি মাঝারি আকারের পাঠ্যবই হাত থেকে মেঝেতে ফেলে দিলে যে পরিমাণ এনার্জি বা শক্তির সৃষ্টি হয় তা ১ জুল শক্তির সমান। কিন্তু ৩০ গ্রাম হাইড্রোজেন অণুর মধ্যে যে পরিমাণ এনার্জি আছে তা পাওয়া যাবে হাজার হাজার গ্যালন গ্যাসোলিন পোড়ানো হলে।
এর আগে আমরা ১ কেজি পানিতে থাকা ১১১ গ্রাম হাইড্রোজেন অণুর এনার্জির পরিমাণ বের করেছি। দেখেছি সে এনার্জির পরিমাণ ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ জৌল। এবার আমরা পুরো এক কেজি পানির কথা বিবেচনা করি। এ পানিতে কিন্তু অক্সিজেনও আছে। এই ১ কেজি পানিতে থাকা অণুর এনার্জির পরিমাণ ১ কোটি গ্যালন গ্যাসোলিনের এনার্জির প্রায় সমান। এই সবটুকু এনার্জি কি বের করে আনা সম্ভব হবে? কখনো কি সম্ভব হয়েছিল? এই ১ কেজি পানির পুরোটাকেই এনার্জিতে রূপান্তর সম্ভব যদি পুরো পানিকে অ্যানিহিলেট বা ধ্বংস করে দেয়া যায়। এ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন ম্যাটার বা বস্তুর পুরোপুরি ধ্বংস সাধন। আর তা শুধু তখনই সম্ভব, যখন ম্যাটারের সাথে সমপরিমাণ অ্যান্টিম্যাটারের সাক্ষাৎ ঘটে। অ্যান্টিম্যাটার সেই বস্তু দিয়ে গঠিত যার চার্জ ম্যাটারের বিপরীত। অ্যান্টিম্যাটারের অস্তিত্ব আছে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয় বা রেডিওয়্যাকটিভ ডিকেতে এটি পর্যবেক্ষণযোগ্য। গবেষণাগারে অ্যান্টিম্যাটার তৈরিও করা হয়েছে। কিন্তু এটি ক্ষণস্থায়ী। তাই বস্তুর সংস্পর্শে আপনা-আপনি ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর এই আপনা-আপনি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঠেকানোর মতো বস্তু যথাশিগগির তৈরি সম্ভব হয় না। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমাদের এক কেজি ‘ওয়াটার’কে পুরোপুরি এনার্জিতে রূপান্তর করা যাবে না এর সাথে ‘অ্যান্টিওয়াটার’ মিশিয়ে। ভবিষ্যতে সম্ভব হবে কি না জানি না। তবে অন্তত এখন সম্ভব নয়।
প্রোটনের মতো ক্ষুদ্র এলিমেন্টারি পার্টিকলের আরেকটি প্রপঞ্চ বা ফেনোমেনন হচ্ছে এরা একীভূত হয়। একটি একক প্রোটন গঠন করে একটি হাইড্রোজেন অণুর নিউক্লিয়াস। একটি হিলিয়াম অণুতে পাওয়া যায় দুটি প্রোটন। এভাবেই পদার্থগুলোর সৃষ্টি হয়। প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে ভারী পদার্থ ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াসে আছে ৯২টি প্রোটন। দুটি ফ্রি প্রোটন তৈরি সম্ভব যেগুলো এক সাথে মিলে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস গঠন করতে শুরু করবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রোটন দুটিকে দ্রুতগতিতে পরসপরের দিকে সজোরে নিক্ষেপ করা। এই প্রক্রিয়াটি ঘটে সূর্যে। ঠিক একই প্রক্রিয়াটি ঘটানো সম্ভব পৃথিবীতেও লেজার ও চুম্বক ব্যবহার করে ঘটানো যাবে একটি পারমাণবিক বোমার কেন্দ্র্রেও। এ প্রক্রিয়ার নাম নিউক্লিয়ার ফিউশন। এর মজার দিক হলো, যখন প্রোটনকে একীভূত হতে বাধ্য করা হয়, তখন তাদের পুরো ভর বা শক্তি ব্যয় করতে হয় না, যে শক্তি বা এনার্জি আমরা E=mc^2 ফর্মুলা ব্যবহার করে বের করি। একীভূত হওয়া প্রোটন দুটির ভর আলাদা দুটি প্রোটনের ভরের সমষ্টির চেয়ে কম। প্রোটন দুটি যখন এক সাথে হয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত ভর পরিণত হয় এনার্জিতে। সাধারণত এর পরিমাণ মোট ভরের ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ওপরের সূত্রানুযায়ী যে পরিমাণ এনার্জি পাওয়ার কথা এর ৭ শতাংশ এনার্জি হিসেবে বের হয়। বাকিটা ভর হিসেবে একীভূত হয়। লোহার চেয়ে ভারী পদার্থ অস্থিতিশীল। এগুলোর কিছু কিছু খুবই অস্থিতিশীল। এর অর্থ হচ্ছে, এগুলোর নিউক্লিয়াস গঠিত ধনাত্মক চার্জসংবলিত অনেক প্রোটনের সমন্বয়ে। এগুলো যেকোনো সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের অণুকে আমরা বলি তেজস্ক্রিয় বা রেডিওয়্যাকটিভ। যেমন ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা রেডিওয়্যাকটিভ সাবস্ট্যান্স। প্রতি সেকেন্ডে ইউরেনিয়ামের প্রচুর অণু পরসপর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। যখন তেমনটি ঘটে, তখন টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া ইউরেনিয়াম মূল ইউরেনিয়াম অণু থেকে কম তেজস্ক্রিয়। আবার ওপরের সূত্রানুযায়ী অতিরিক্ত ভর অদৃশ্য হয়ে যায় এনার্জি হিসেবে। এই প্রক্রিয়ার নাম নিউক্লিয়ার ফিউশন।
এই উভয় ধরনের পারমাণবিক বিক্রিয়াই সামান্য পরিমাণ ভরকে বের করে দেয় এনার্জি হিসেবে। আর বেশির ভাগ এনার্জি যেখানে খরচ হয়, তা সম্ভবত আপনিও জানেন। পারমাণবিক অস্ত্রে কাজে লাগানো হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। আর পারমাণবিক বোমায় ব্যবহার হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে নিক্ষিপ্ত বোমায় এটা ব্যবহার হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও চলে এই একই প্রক্রিয়া।
আইনস্টাইন বুঝতে সক্ষম ছিলেন তার এই বিখ্যাত সমীকরণের প্রয়োগ কত দূর যেতে পারে। স্বভাবগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে আইনস্টাইনকে আমরা জানি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে। তবু বলা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে আণবিক বোমার ওপর গবেষণা করার জন্য অর্থ চেয়ে চিঠি লিখতে তিনি সহায়তা করেছিলেন। আর সেই সূত্রেই নাৎসি জার্মানি ও জাপানিদের আগেই মার্কিনিদের হাতে আসে পারমাণবিক বোমা।
সেই চিঠিই জন্ম দেয় মানহাটান প্রজেক্ট। আর আণবিক
No comments