The SPITZER-"অদম্য স্পিটজারের গল্প"
Spitzer Space Telescope |
অদম্য স্পিটজারের গল্প!
ট্রাপিস্ট -১ স্টার সিস্টেমের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, এই স্টার সিস্টেমই সাম্প্রতিক সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মনে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করেছে! ট্রাপিস্ট-১ কে কেন্দ্র করে যে ৭টি গ্রহ ঘুরছে, তার মধ্যে ৩টিই রয়েছে হ্যাবিটেশনাল জোনে। ফলে এখানে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে কোনো প্রাণের কিংবা মানবজাতির ভবিষ্যৎ আন্তঃনাক্ষত্রিক যাত্রার একটি গন্তব্য হতে পারে স্টার সিস্টেম।
এই আবিষ্কারের নেপথ্যে যে মহানায়ক ছিল, তার নাম স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ! ৭২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০০৩ সালের ২৫ আগস্টে নাসার গ্রেট অবজারভেশান প্রোগ্রামের ৪র্থ এবং শেষ মিশন হিসেবে স্পিটজারকে ফ্লোরিডার কেপ কেনারেভাল স্পেস সেন্টার থেকে ডেল্টা-২ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়।
অবলাল রশ্মি ক্যাপচার করে তাপীয় উৎস, অবলাল রশ্মি ( infrared ray ) নির্গত করে এমন মহাজাগতিক বস্তুর বর্ণালীবীক্ষণ করা এবং ছবি তোলা ছিল ১৮৭৭ পাউন্ডের টেলিস্কোপটির প্রধান কর্মযজ্ঞ! সাধারণত মহাকাশ থেকে অবলাল রশ্মি পৃথিবীতে আসতে আসতে বায়ুমণ্ডলেই বেশিরভাগ শোষিত হয়ে যায়। তাই স্পিটজারের মতো স্পেস টেলিস্কোপ তৈরি করা জ্যোতির্বিদদের কাছে খুবই দরকারি ছিল।
নাসা ঐতিহ্যগতভাবেই প্রত্যেকটা স্পেস টেলিস্কোপের নামকরণ কোনো বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নামে করে। স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয় জ্যোতির্বিদ লেম্যান স্পিটজারের নামে। ১৯৪০ সালের দিকে লেম্যান স্পেস টেলিস্কোপের ধারণা দেন। রকেট সায়েন্স এবং জ্যোতির্বিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এই প্রতিভাবান!
স্পিটজারের মিশন ব্যাপ্তিকালের পরিকল্পনা করা হয় ২.৫ থেকে ৫ বছরের জন্য। প্রাথমিক মিশন চলে ৫ বছর, ৮ মাস, ১৯ দিন পর্যন্ত! স্পিটজারের অনুসূর ও অপসূর যথাক্রমে ১.০০৩ এবং ১.০২৬ জ্যোতির্বিদ্যার একক।
ইনফ্রারেড অ্যারে ক্যামেরা, ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোগ্রাফ এবং মাল্টিব্যান্ড ইমেজিং ফটোমিটার নিয়ে স্পিটজারের কাজ করার জন্য প্রয়োজন ছিল প্রায় -১৬৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হতো তরল হিলিয়াম গ্যাস। ১৫ মে, ২০০৯ সালে তরল হিলিয়ামের সরবরাহ শেষ হয়ে যায়। মহাবিপদ! এদিকে বিজ্ঞানীদেরও স্পিটজার মিশনের ব্যাপ্তিকাল প্রসারিত করবার ইচ্ছে।
জ্যোতির্বিদরা অসাধারণ একটি পরিকল্পনা করলো। পরিকল্পিত এই মিশনের নাম দেওয়া হলো স্পিটজার ওয়ার্ম মিশন। উপযুক্ত তাপমাত্রার অভাবে আগেই বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ অচল হয়ে গিয়েছিল। তবে নিম্ন তাপমাত্রায় তারা দুটি ইনফ্রারেড অ্যারে ক্যামেরাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রায় সকল গ্রহই সব ধরণের আলো শোষণ করলেও বেশিরভাগ বিকিরণ করে অবলোহিত আলোয়। তাই এক্সোপ্ল্যানেট হান্টে স্পিটজার দারুণভাবে সফল হয়! এছাড়াও গ্যালাক্সি, নেবুলা, নক্ষত্রদের অবলাল আলোয় অপূর্ব ছবি তুলে ইনফ্রারেড এস্ট্রোনমিতে ব্যাপক অবদান রাখে স্পিটজার।
স্পিটজার আমাদের সৌরজগতের বাইরের অন্য স্টার সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য এক্সোপ্ল্যানেটের ছবি তুলতে সক্ষম হওয়ায় স্পেস টেলিস্কোপদের ইতিহাসে এটি অন্যতম বিস্ময়! স্পিটজারের আগে অন্য টেলিস্কোপগুলো কেবল ট্রানজিট সিস্টেম ব্যবহার করে গ্রহ শনাক্ত করা গেছে, কিন্তু ছবি তোলা যায়নি। স্পিটজার এই কাজ প্রথমবারের মতো করে প্লানেটারি এস্ট্রোনমিতে অভাবনীয় অবদান রেখেছে। ২০০৫ সালে স্পিটজার একটি এক্সোপ্ল্যানেটের চারপাশে সৃষ্টি হওয়া নতুন একটি বলয় শনাক্ত করে, যা গ্রহের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট ভাবায়। ২০০৬ সালে স্পিটজার একটি এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ম্যাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়।
মহাবিশ্বের রক্তিম সরণের কারণে বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ১০ কোটি বছর পরের একটি তারার আলো শনাক্ত করতেও সক্ষম হয় স্পিটজার স্পেস অবজারভেটরি!
স্পিটজারের পর বিজ্ঞানীরা এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে পড়ে। ফলে নির্মিত হয় কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ। এক্সোপ্ল্যানেট শিকারে সর্বোচ্চ সফল স্পেস টেলিস্কোপ বলা হয় কেপলারকে। পেজের স্পেস টেলিস্কোপ সিরিজের ১ম পর্ব ছিল এই কেপলার স্পেস টেলিস্কোপকে নিয়েই।
ওহ... প্রথমেই তো বলেছিলাম ট্রাপিস্ট-১ স্টার সিস্টেমে অবস্থিত গ্রহগুলোর কথা। এই স্টার সিস্টেমটি স্পিটজার আবিষ্কার করেছিল ২০১৬ সালে। ২০০৯ সালে যে টেলিস্কোপের আয়ু শেষ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল, সেই টেলিস্কোপটি ২০১৬ সালে এসে এতো বড় একটি আবিষ্কার করলো। সকল বাঁধাকে উপেক্ষা করে অদম্য স্পিটজার এখনো কাজ করে চলছে মহাকাশ শিকারে!
No comments