Pages

নিকোলাস কোপার্নিকাস-আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার জনক


আমার প্রিয় বিজ্ঞানী-নিকোলাস কোপার্নিকাস


আমার প্রিয় বিজ্ঞানী আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার জনক নিকোলাস কোপার্নিকাস,আইন্সটাইন যাকে বলেছেন "আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের পথিকৃৎ" কারণ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সম্ভব হয়েছে কেপলার,গ্যালিলিও,নিউটনের যুগান্তকারী আবিষ্কারসমূহ যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্যযুগীয় ভ্রান্ত ধারণা মুছে দিয়ে জ্ঞানবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায় যা Copernican Revolution নামে বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
কোপার্নিকান এর অবদানেই আমরা পেয়ে যায় আমাদের সৌরজগতের আসল পরিচয় Heliocentric Model,পৃথিবীর ও অন্যান্য গ্রহ-উপগেহের গতিপথের ধরন,পৃথিবী থেকে অন্যান্য গ্রহসমূহের দূরত্ব,পৃথিবীর অক্ষীয় ঘূর্ণন ইত্যাদি।


Heliocentric(সৌরকেন্দ্রীক) vs Geocentric(ভূকেন্দ্রীক)
তিনিই এই সত্য বের করতে পেরেছিলেন যে,পৃথিবী নয় বরং সূর্যই কেন্দ্রে এবং অন্যান্য সব গ্রহ একে কেন্দ্র করে ঘুরে।এই সত্য তিনি প্রথম তার বই "Commentariolus" এ ১৫১৪ সালে প্রকাশ করেন।কোপার্নিকাস এর আগে  যদিও আরিস্টাকাস 'সৌরমডেল' এর ধারণা দিয়েছিলেন তবে তার চেয়ে কোপার্নিকাস এর হিসেবনিকেশ সুক্ষ্ম ও নির্ভুল ছিলো।অনেক উপহাসের স্বীকার এবং হুমকির স্বীকার হয়ে তিনি তার যুগান্তকারী দ্বিতীয় বইটি "De revolutionibus orbium coelestium" প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছিলেন কারণ সৌরকেন্দ্রিক মডেল বাইবেল বিরোধী!১৫৪৩ সালে জানের ভয় নিয়ে এক প্রকাশক বইটি প্রকাশ করেন উপরে এটা লিখে দিয়ে,
"বইটি সম্পূর্ণ সত্য নয় কেবল ব্যক্তিগত অনুমানের উপর লিখিত।"
অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছিল কারণ এ সময় বাইবেলের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যু।পরে অবশ্য মানুষ তার বইয়ের আসল পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাই।বইটি ছাপা হয়ে যখন তার হাতে আসে তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়,পড়তে পারেননি কিছুক্ষণ নড়াচড়া করেই এর কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান ৭০ বছর বয়সের এই মহান বিজ্ঞানী!


তার লেখা ৪০ পৃষ্ঠার অপর একটি বই "Sketch of Hypothesis" কে তার প্রদত্ত মহাবিশ্বের মডেলের সারকথা হিসেবে উল্লেখ করা হয়,এটাও ১৫১৪ সালে প্রকাশিত হয়।তবে তার মৃত্যুর পর পর প্রায় ৩০০ বছরের জন্য রোমান শাসক তার বইকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলো।
কোপারনিকাস এর আবিষ্কার তথা পর্যবেক্ষণ মহাবিশ্বের প্রতি আমাদের ধারণা পালটে দেয়।তবে তার একটি ধারণা ভুল ছিলো সেটা হলো, গ্রহ-উপগ্রহ সমূহ সম্পূর্ণ বৃত্তীয় পথে আবর্তন করে যদিও কেপলার পরবর্তীতে এটি শুধরে দেন যে,বৃত্তীয় নয় বরং উপবৃত্তাকার কক্ষপথেই জ্যোতিষ্কসমূহের আবর্তন সম্পন্ন হয়।
তবে তার প্রদত্ত Cosmological Principal বিজ্ঞানের এক অনন্য প্রাপ্তি যেটি 'Genuine Copernican Cosmological Principle' নামে পরিচিত;যেখানে বলা হয়েছে-"যেকোন গ্রহ থেকেই দেখা হোক না কেন মহাবিশ্বকে সবদিকথেকে মোটামুটি একই দেখাবে যেটিকে আরেকটু বুঝিয়ে বললে দ্বারাই মহাবিশ্ব দিকনিরপেক্ষ বা সবদিক থেকে একই।"

অর্থনীতিতে কোপার্নিকাসের অবদান এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।যথাক্রমে ১৫১৭ ও ১৫১৯ সালে তিনি অর্থনীতির একটি মূল ধারণা "Quantity Theory Of Money" এবং "Gresham’s Law" এর ধারণা দেন।

বিচিত্র বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য ছিলো।তিনি অধ্যয়ন করেছেন মূলত ধর্মশাস্ত্র,গণিতশাস্ত্র,জ্যোতির্বিদ্যা এবং চিকিৎসাশাস্ত্র।তিনি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং কিছুদিন অধ্যাপনাও করেছেন কিন্তু তৎকালীন ভূকেন্দ্রীক মডেল তার ভুল মনে হচ্ছিলো তাই শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে নিজ গ্রামে এসে নিরলস পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার পর তা লিপিবদ্ধ করেন যা এক নতুন যুগ সৃষ্টি করে।


'কোপার্নিক' শব্দের অর্থ বিনয়ী,তিনি সত্তিই খুব বিনয়ী ছিলেন।জ্যোতির্বিদ ছাড়াও তিনি ছিলেন দক্ষগণিতজ্ঞ,শিক্ষক,সরকারের উপদেষ্টা,অর্থনীতিবিদ,চিকিৎসক এবং সমাজকর্মী।তার জন্ম ও মৃত্যু পোল্যান্ড যথাক্রমে ১৪৭৩ ও ১৫৪৩ সালে।অবিবাহিত এই মহান বিজ্ঞানীর  কোন স্ত্রী পুত্র ছিলো না।
তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো-
"To know that we know what we know, and to know that we do not know what we do not know,that is true knowledge."
(Nicolaus Copernicus)

1 comment:

Theme images by sololos. Powered by Blogger.