Saturday, July 27, 2019

অল্প কথা,অল্প আহার,অল্প ঘুম

অল্প কথা,অল্প আহার,অল্প ঘুম


মাঈন উদ্দিন



জীবনের মূল তিন চালিকাশক্তি হল আহার,নিদ্রা ও কথা।একটু ভাবলেই বুঝবেন,খাদ্য ছাড়া মরণ সুনিশ্চিত,ঘুম ছাড়াও বেঁচে থাকা সম্ভব নয় আর যোগাযোগের মাধ্যম হলো কথা এবং এটা ছাড়াও বেঁচে থাকা বেশ দূরহ।
ঘুমের মধ্যে আমরা জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করি আর এই সময়টুকু কমিয়ে যারা ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে তারাই সফল হয়।খাদ্য আমাদের বেঁচে থাকার জৈবিক শক্তি যোগায় অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত,মানহীন,দুষিত ও বিষাক্ত খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ।অযথা অর্থহীন কথা বলে নিজের সীমিত সময়ের অপচয় করা বেশ খারাপ অভ্যাস এবং এর মাধ্যমেই কিন্তু 'আকবারুল কাবায়ের' বা সর্ববৃহৎ পাপসমূহ সংগঠিত হয়।তাই চলুন দেখে নিই কীভাবে অল্প কথা,অল্প ঘুম এবং অল্প আহারের মাধ্যমে জীবন গড়ে তোলা যায়-

অল্প কথাঃ

একদা রাসূল (সাঃ) তাওহীদ,নামাজ,রোজা,হজ্জ,সদকা,তাহাজ্জুদ ও জিহাদের আলোচনা করে সাহাবিদের বললেন;যদি তোমরা চাও তাহলে এসবের মূল কী তা বলে দিতে পারি-
সাহাবী মুআয (রাঃ) বললেন,হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ),আপনি বলে দিন।
রাসূল (সাঃ) তার জিহ্বাকে ধরে বললেন,"এটাকে সংযত রাখ"
এর মাধ্যমে বুঝা যায় নিজের জবানকে সংযত রাখার গুরুত্ব কতটুকো কারণ নীরবতা তথা অল্প কথার মাধ্যমে জবানকে সংযত রাখার ফলে নিজ এবং অন্যকেও অনেক বড় বড় পাপ থেকে বিরত রাখা যায় ফলে মানুষের ইমান,আমল,আখলাক সবই পরিশুদ্ধ হয়ে যায়।
একটু ভাবলেই বুঝবেন,আমরা প্রতিনিয়ত কেবল অবান্তর কথাবার্তা,গল্পগুজব,ঠাট্টা-তামাশা,দ্বন্দ্ব-কলহ,তর্ক,গালি,অশ্লীলতা,আত্মগরিমা,তোষামোদির মাধ্যমেই মিথ্যা,গীবত,কুফরীর মত বড় বড় পাপে লিপ্ত হয়ে যায় অথচ কেবল এই জবানকে সংযত রাখার মাধ্যমেই এতোসব পাপ থেকে দূরে থাকা যায়।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়,পরকালে প্রত্যেকটি কথার হিসাব দিতে হবে তাই অযথা বাক-বিনিময় না করে নীরবতায় বেশি সময় কাটানো উচিৎ কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীরবতাই শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয় ফলশ্রুতিতে পাপে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।রাসূল (সাঃ) বলেছেন,"চুপ থাকলে মানুষ ষাট বছরের ইবাদত করার সওয়াব প্রাপ্ত হয়।"

অল্প আহারঃ

'অতি ভোজনে মরণ' কথাটি একেবারে সত্য।অস্বাস্থ্যকর খাবার পেটপুরে খাওয়া আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস।মাছে ভাতে বাঙ্গালীর ফাঁদ কাটিয়ে না উঠতে পারলে অতি আহারের দরুণ সবচেয়ে মারাত্মক যে সমস্যা তা হলো নিদ্রা বেড়ে যাওয়া।এমন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ঘুম ছাড়া কিছুই সূচারুরুপে হয়না।
যত বেশি পরিমাণে সজীব কোষ খাওয়া যায় তা আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম তাই উপযুক্ত খাদ্য তালিকা তৈরি করে Food Pyramid অনুসারে এবং নিজের স্বাস্থ্য বিবেচনায় আহার করা উচিৎ।
সবসময় বিশুদ্ধ,হালাল,পুষ্টিকর খাবার খেলে নিজের দেহ ও মন কখনোই নিস্তেজ হয়না কারণ একমাত্র সজীব খাদ্যই জীবনকে সজীব রাখে।
হালাল খাদ্য হালাল দেহের সাথে হালাল মন তৈরি করে দেয় আর এমন বান্দার ইবাদত স্রষ্টার কাছে কখনোই অগ্রাহ্য হয়না।তাই সকলের উচিৎ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ খাবার খাওয়া এবং অতি ভোজন পরিহার করে শরীরের জৈবনিক বিশ্রামে সাহায্য করা তাহলে শরীরে ক্লান্তি ভর করবেনা এবং কোন কাজে ঘুম ব্যাঘাত ঘটাবে না তা হোক গভীর রাতের তাহাজ্জুদ অথবা নিতান্ত ব্যক্তিগত কোন কাজ।

অল্প ঘুমঃ

মানুষ জীবনের ১/৩ সময় ঘুমিয়ে কাটায় আর যারা এই সময়টাকে কমিয়ে আনতে পারে তারাই দ্রুত সফলকাম হয়।অতি নিদ্রা অলসতা ছাড়া আর কিছুই নয় তাই এ অভ্যাস পরিহার করে নিজের জীবন ও সময়ের প্রতি যত্নবান হোন।একবার আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তার এক সাহাবীকে বললেন-
"রাতে খুব বেশি ঘুমাবেনা কারণ বেশি ঘুমানো ব্যক্তি কিয়ামতের দিন খালি হাতে হাজির হবে।"
অন্য এক হাদীসে নবী কারীম (সাঃ) বলেন-
"আল্লাহ পাক তিনটি আওয়াজ খুব পছন্দ করেন;মোরগের ডাক,কোরআন তিলওয়াতকারীর আওয়াজ এবং রাতের শেষাংশে প্রভুর দরবারে বান্দার মিনতির আওয়াজ।"
8 ঘণ্টার চেয়ে কম এবং ৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ঘুমানো লোকদের মৃত্যু দ্রুত হয় তাই সবার উচিত Sleep Hour এর মাঝামাঝি রাখা।
আমাদের অধিকাংশ মানুষই Biphasic বা দুই ধাপে ঘুমাই,একটা রাত্রীকালীন দীর্ঘ ঘুম আর অন্যটি দুপুরের স্বল্পকালীন ঘুম।খাদ্যাভ্যাসের উপর ঘুমের মান নির্ভর করে তাই পরিমিত বিশুদ্ধ খাবার খেলে শরীরে কম বিশ্রামের প্রয়োজন হয় তখন ঘুমের পরিমাণ ৮ ঘণ্টা থেকে ৪,৫ বা ৬ ঘণ্টায় কমিয়ে আনা যায় এবং এই সময় নিজের কল্যাণে ব্যয় করা যায়।
অতএব অল্প কথায় গভীর থেকে,অল্পাহারে তুষ্ট থেকে এবং অল্প নিদ্রায় সুস্থ থেকে জীবনকে মার্জিত,অর্থবহ,সজীব ও সুন্দর রাখতে সচেষ্ট হোন এবং অল্পের জীবনে বেশি বেশি সালাত আদায়,সাওম পালন,সদকা দেওয়া,জ্ঞানে-গুণে মজ্জাগত হওয়া,সততা ও বিনয়ে উচ্চ হওয়ার মধ্যমে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলুন।

লেখকঃমাঈন উদ্দিন
basrimyin@gmail.com

2 comments: